Ad

একাকীত্ব


লেখক- আলম মিদ্দে, ওয়েব সম্পাদনা- সেখ মইনুল হাসান


আজ গোটা পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের  দূরত্ব,, কেবলমাত্র একটি "বটন" ক্লিক  করেই ঘুচিয়ে ফেলা সম্ভব।। অথচ,, জানিনা,, আমরা কেন যে একেবারে নিকতবর্তী মানুষের কাছ থেকে হাজার  হাজার মাইল দূরে চলে গিয়েছি।।বর্তমানে,,, যেদিকেই তাকাই না কেন,, হাজার হাজার মুখের ডিজিটাল হাসি দেখে থাকি।।কারো কাছে সাজানো বাংলো বাড়ি,, কারো কাছে অপরূপা সুন্দরী নারী,, কারো লাক্সরি গাড়ি,, কারো কাছে লাখ টাকার মোবাইল,, কারো আবার
কিউট বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড।।কিন্তু,, একজন মধ্যম মানের এক্টরের কাছেও,, উপরিউক্ত সকল কিছুই সহজলভ্য!!
এর পরেও তারা সুসাইডের মতো চরম পথ বেছে নেয় কেন ?? কেন নিজেই হয়ে ওঠে,, নিজের প্রাণের
দুশমন ??এর একমাত্র কারণ ,, একাকীত্ব !!আমরা ছেলেবেলায় দিনের প্রায় ৮/১০ ঘন্টা দাদু/দিদা,, ঠাকুমা/ঠাকুরদার
সঙ্গে কাটিয়েছি।। এই ৮/১০ ঘন্টা,, আমরা একান্ত আপন--জনের সঙ্গে নিজের দুঃখ-ব্যাথা-যন্ত্রণা,, সমস্ত প্রবলেম শেয়ার করেছি।। এরপর টেকনোলজি এসেছে।। আমরা এক রুমের মধ্যে থেকেও,, একা থেকেছি। চূড়ান্ত একাকীত্বের শিকার হয়ে চলেছি।। ভালোমন্দ শেয়ার করার জায়গায় এসে গেছে,, গোপনীয়তা বজায় রাখার খেলা।। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়,, কষ্ট যতোটা গোপন করবেন,, ক্রাইম করার প্রবণতা ততোটাই বেড়ে যাবে।। এইসব কষ্টের বহিঃপ্রকাশ ঘটে,, যন্ত্রণায় ভোগা মানুষটির চাল-চলনে।। নিবিড় সম্পর্ক থাকলে,, তবেই পড়ে নেওয়া যায়,, এই ব্যাথিত হৃদয়ের ভাষা।।
কিন্তু,, সময় কোথায় ??আমরা ভীষণ ব্যাস্ত !! এক ছাদের নিচে থেকেও,, আমরা একে অপরকে চিনতে পারি না।।
আমরা বুঝতেই পারি না,, জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া সৈনিকের চোখের ভাষা।। খুঁজে দেখার চেষ্টা করিনা,, তার পরাজয়ের আসল কারণ।। অতঃপর,,,আমাদের প্রিয় মানুষটি অবসাদের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকে।। বেছে নিতে বাধ্য হয়,, আত্মঘাতী পথ।।  কিন্তু,,, এই সদাহাস্য মুখগুলো কেন বেছে নেয় আত্মঘাতী পথ ?? কারণ,,
বাইরে থেকে দেখা এই সহজ-সরল মুখগুলোর ভিতরে লুকিয়ে থাকা অব্যাক্ত যন্ত্রণা,, যেটা আমরা দেখতে পায় না।। তাদের হৃদয়ের অন্দরে কি সাংঘাতিক যুদ্ধ- দামামা বেজে চলে,, আমরা বুঝেও বুঝি না।। এই যুদ্ধ,, ছোট্ট কোনো দূর্ঘটনা থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে,, আমদের মন এবং মস্তিষ্ক-কে।। আমরা নিজেরাই নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করি।। এরপর,, চরম পরিণতি !!একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ,, নিজের দুঃখ যন্ত্রণা বর্ণনা করে থাকেন,, তার
প্রতিপালকের কাছে।। এছাড়াও মানুষ নিজের দুঃখ-কষ্ট,, নিজের পিতা,সন্তান,ভাই,ভগিনী, বন্ধু-বান্ধব,, এবং নিকট আত্মীয়ের কাছে শেয়ার করে,, নিজের যন্ত্রণার বোঝা কিছুটা হালকা করে থাকে।।বাড়ির বয়স্ক মানুষের সঙ্গে নিজের অব্যাক্ত যন্ত্রণা শেয়ার করলে,, খুব সহজেই দুরাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব।। অভিজ্ঞতা ভীষণ দামী,, যখন সবকিছু ফেলিওর হয়ে পড়ে,, অভিজ্ঞতা দারুণ কাজে লাগে।। সুসাইডের অনেক কারণ থাকতে পারে।।কিন্তু,, গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেই,, আপনার আপনজনের পরিবর্তন গুলো খুঁজে পাবেন।। তার পাশে থেকে,, তার যন্ত্রণাগুলো গুরুত্বসহকারে শুনে,, তাকে উৎসাহিত করুন।। তাকে....বোঝাতে হবে,, হাজারো যুদ্ধের সমন্বয়ে গঠিত হয় জীবন নামের মহামূল্যবান ইমারত।। একটি যুদ্ধে পরাজয় মানেই,, জীবন থেকে হেরে যাওয়া নয়।। আজকের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আজকের পরাজয়ের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে,, ভবিষ্যতে বিজয়ী হওয়ার সমস্ত উপাদান।। শুধু খুঁজে নিতে হবে !!আমাদের মাথায় রাখতে হবে,, প্রত্যেকটি আপনজন কিন্তু আমাদের সাহস জুগিয়ে যাবে না।। কেউ কেউ আমাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেবে।। তাই,, নিজের সমস্যাগুলো কেবলমাত্র তার কাছেই শেয়ার করতে হবে,, যে আপনাকে ভালোভাবে জানে,, আপনাকে বোঝে,, এবং,, দুঃসময়ে আপনার পাশে থেকে,,
আপনাকে উৎসাহিত করতে পারে।।মোদ্দা কথা হলো,,, যাকে আপনি চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারেন।।যদি এমন মানুষ না থাকে ??আমার পরামর্শ হলো,,,অন্তত দুজন এমন মানুষ তৈরী করুন,, যার কাছে আপনি মনের কথা প্রাণখুলে বর্ণনা করতে পারেন।। আর দেরী নয়,,, এখনই লেগে পড়ুন।। মনে রাখবেন,,, আজকের এই স্বার্থপরতার যুগে,, একজন মনের মানুষ পাওয়া মানে,, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন-টি পেয়ে গেলেন।।


Post a Comment

0 Comments