বিপ্লবী বীরদর্পে এগিয়ে গেলেন ফাঁসির মঞ্চের দিকে। মঞ্চে উঠে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলেন ঝুলন্ত দড়ির সামনে। তিনি জানেন কিছুক্ষনের মধ্যেই ওই দড়িই ভেঙে দেবে তার শ্বাসনালী। কেড়ে নেবে তাঁর প্রাণ। ভয়কে ভয় দেখিয়ে তিনি ফাঁসির দড়িটিকে চুম্বন করলেন। তিনিই বিপ্লবী আসফাক-উল্লাহ খান। ১৯২৭, ১৯ ডিসেম্বর এই দিনেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বিপ্লবী আসফাক-উল্লাহকে।
১৯২৫, ৯ আগস্ট , উত্তরপ্রদেশের কাকোরি। ট্রেন ভরতি ইংরেজ সরকারের টাকা পয়সা যাচ্ছে। ট্রেনে হামলা করল ‘হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মি’। হামলা সফল হয়। কিন্তু ধরা পরে যান ট্রেন হামলার মূল চক্রীসহ প্রত্যেকে। মূল চক্রীদের অন্যতম ছিলেন আসফাক-উল্লাহ। এই ট্রেন হামলার উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য অস্ত্রশস্ত্র কেনা।
ফিরে যাওয়া যাক ৯১ বছর আগের সেই দিনটিতে। কেমন ছিল বিপ্লবী আসফাকের ফাঁসির আগের মুহূর্তগুলি? ফাঁসির দিন চারেক আগের ঘটনা। দুই ব্রিটিশ কর্মকর্তা যেখানে আসফাক থাকতেন সেই নিঃসঙ্গ সেল দেখতে আসেন। তিনি তখন নামাজ পড়তে ব্যস্ত। এক ব্রিটিশ পুলিশ ইচ্ছা করে আসফাককে উদ্দেশ্য করে বলে “আমি দেখতে চাই যখন এই ইঁদুরটাকে ঝোলানো হবে তখন তাঁর কতটুকু ধর্মবিশ্বাস থাকে”। আসফাক অবিচলিত থেকে চালিয়ে গেলেন নামাজ। ১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭ সোমবার, আসফাকউল্লা খানকে দুই স্তর উপরে বেদিতে উঠিয়ে দেওয়া হয়। শিকল থেকে মুক্ত করা হয়। বিস্ময় ভরা চোখে তিনি ফাঁসির দড়ির কাছে যান এবং সেটিকে চুমু খেয়ে বললেন : “আমার হাত কোনও মানুষ মারা যায়নি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আল্লাহ আমাকে ন্যায়বিচার দেবেন।” এরপরেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হয়ে যায় তাঁর। শহিদ আসফাক-উল্লাহ খান।
১৯২৫, ৮ আগস্ট বিপ্লবীরা ইংরেজশাসনাধীন ভারতের শাহজাহানপুরে হামলার ছক কষেন।সিদ্ধান্ত হয় যে তারা সরণপুর-লখনউ চলাচলকারী ৮-ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে ব্রিটিশ সরকারের কোষাগার লুঠ করবেন। ৯ আগস্ট ১৯২৫ আসফাকউল্লাহ খান এবং রামপ্রসাদ বিসমিলের নেতৃত্বে ট্রেন লুঠ হয়। সঙ্গ দিয়েছিলেন রাজেন্দ্র লাহিড়ী, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, চন্দ্রশেখর আজাদ, কেশব চক্রবর্তী, বনওয়ারী লাল, মুকুন্দি লাল, মন্মথনাথ গুপ্ত এবং মুরারীলাল। ধরা পড়ে যাওয়ার পর প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার ‘কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু করে। এই মামলতেই আসফাক-উল্লাহ খানসহ রামপ্রসাদ বিসমিল, রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রৌশন সিংয়ের ফাঁসি হয়। শচীন্দ্রনাথ সান্যালের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। বাকিদের পাঁচ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত জেল হয়।
সূত্র, কলকাতা ২৪*৭
0 Comments