Ad

স্বাধীনতার জন্য লড়াই করার অপরাধে ব্রিটিশরা মহিলা নেত্রী আসগরি বেগমকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে


সংগ্রহ- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম শহিদ, প্রশান্ত হালদার

আসগরি বেগম-উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফরনগর জেলায় থানাভবন গ্রামে ১৮১১ সালের ৬ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। থানাভবনের বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা কাজী আব্দুল রহিম খাঁ’র জননী ছিলেন। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে যোগ দেন এবং বৃটিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে অংশ নেন। ব্রিটিশরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।
হাবিবা খাতুন – উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফরনগর জেলার এক গ্রামে ১৮৩৩ সালে জন্মগ্রহন করেন। গুর্জর মুসলিম পরিবারের তরুণী মহিলা। তিনি মুসলিম মহিলাদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন এবং সকলেই যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করেন। তার বাহিনী নিয়ে ১৮৫৭ সালে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে মহাবিদ্রোহে যোগদান করেন এবং ইংরেজ সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজদের হাতে বন্দী হন এবং ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন।
জামিলা- ১৮৩৫ সালে উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফরনগর জেলার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাঠান পরিবারের তরুণী মহিলা। একটি নারীবাহিনী গড়ে তোলেন এবং সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। মহাবিদ্রোহে অংশ নিয়ে ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত ও বন্দী হন। ১৮৫৭ সালে তাঁর ফাঁসি হয়।
মুন্দার- উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসির অধিবাসী। এই মুসলিম মহিলা ঝাঁসির রানীর ঘনিষ্ট সহচরি ছিলেন। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে অংশগ্রহন করেন। মহারানী লক্ষীবাই এর পাশে থেকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঝাঁসি,কুঁচ কালপি এবং গোয়ালিয়রে যুদ্ধ করেন। গোয়ালিয়রে কোটাহু-কি-সরাই এর যুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃতদেহ ১৮৫৮ সালের ১৭ ই জুন গোয়ালিয়রে বাবা গঙ্গাদাস এর বাগানে সমাধিস্থ করা হয়।
রহিমি-উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফরনগর জেলায় ১৮২৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন। মুসলিম রাজপুত পরিবারের যুবতি মহিলা। তিনি ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে যোগদান করেন এবং ব্রিটিশ আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সংগ্রাম করেন। যুদ্ধে বন্দী হন এবং ১৮৫৭ সালে ফাঁসিতে শহিদ হন।
রণবিবি-উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফরনগর জেলার এক গ্রামে ১৮৩০ সালে জন্ম। বৃটিশ বাহিনী প্রতিরোধের জন্য সংগ্রাম করেন এবং ১৮৫৭ সালে ফাঁসিতে শহিদ হন।
এছাড়াও তাদের সাথে আরও ১১ জন যুবতি মহিলা যোদ্ধার ফাঁসি হয় এবং ২৫৫ জন মহিলা যোদ্ধা যুদ্ধে শহিদ হন।
হযরত মহল- উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌয়ের অধিবাসী। হযরত মহল ইংরেজ কর্তৃক সিংহাসনচ্যূত অযোধ্যার নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ্ এর স্ত্রী এবং যুবরাজ বিরজিস কাদের-এর মা। তিনি কম্পানি রাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে অন্যতম প্রধান নেত্রী ছিলেন। বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে লক্ষ্ণৌ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করে ক্ষমতা দখল করেন এবং তার পুত্র যুবরাজ বিরজিস কাদেরকে অযোধ্যার নবাব ঘোষণা করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য বিদ্রোহী সৈন্যবাহিনী সংগঠিত করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তীব্রতর করার উদ্দেশ্যে নানাসাহেবের বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হন। সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে শাহাজাহানপুরে ইংরেজের সাথে যুদ্ধ করেন।
ব্রিটিশের আক্রমণের তীব্রতায় পশ্চাদপসরণ করে নামপাড়া চলে আসেন। নিজ সৈন্যবাহিনী পুনর্গঠিত করার জন্য নেপাল চলে যান। তিনি ব্রিটিশ সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন। সম্ভবত নেপালেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী ভারতে সিপাহী বিদ্রোহ দমনের জন্য সৈন্য পাঠিয়েছিলেন তা হযরত মহলের জানা ছিল না।

Post a Comment

0 Comments