Ad

ইংরেজের সঙ্গে কাপুরুষের মতো সন্ধি করেননি, দেশের জন্য লড়াই করে শহীদ হয়েছেন টিপু সুলতান


 টিপুর জন্ম হয় ১৭৫০ সালে। বীর পিতা ‘মহীশূর ব্রাঘের’ মৃত্যু হলেও পিতার যোগ্য পুত্র হিসাবে পিতা অপেক্ষা বীরত্বে কোন অংশে কম ছিলেন না। পিতার ন্যায় তাঁরও ছিল ইংরেজদের দেশচ্যূত করার পবিত্র কামনা। তিনি মেথিউ সাহেবকে বদনূরে সসৈন্য বন্দি করেন এবং মাঙ্গালোর অধিকার করেন। ১৭৮৪ সালে ইংরেজরা টিপুর সাথে অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতার সাথে সন্ধি করে। কিন্তু ইংরেজরা এবারও সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে নিজাম ও মারাঠাদের সহযোগিতায় ভিন্ন দিক থেকে মহীশূর আক্রমণ করে। টিপু এক বছর পর্যন্ত তাদের ঠেকিয়ে রাখেন। কিন্তু অবশেষে পরাজয় বরণ করে এক সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। অর্ধেক রাজ্য, প্রচুর অর্থ এবং দুই পুত্রকে জামিন রেখে অত্যন্ত মনবেদনার সাথে তাকে মেনে নিতে হয়েছিল ওই সন্ধি, যা পরাজয়ের নামান্তর। তবুও আবার তিনি ভীষন দূরদর্শিতা ও তৎপরতায় সৈন্য গঠন করলেন। এবং পিতা হায়দারের মতো মারাঠারাও নিজামের সাথে সন্ধির আবেদন জানালেন। এবার মারাঠারা পুরোপুরি প্রত্যখ্যান করল সুলতানের এই সাধু প্রস্তাব। নিজামও ইংরেজদের ওই বাধ্যতামূলক সন্ধি মেনে নিয়েছিলেন।
মি. ওয়েলেসলির তথা ইংরেজদের রাজ্য বিস্তারের পথে বিরাট প্রতিবন্ধক ও প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিশ্চিহ্ন করতে মিত্রশক্তি ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চতুর্থ মহীশূর যুদ্ধ সংঘটিত হয় ১৭৯৯ সালে। টিপু দেশি-বিদেশি ওই, সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে অত্যন্ত বীরত্ব ও যোগ্যতার সাথে লড়েও জয়ী হতে পারলেন না। টিপুর শ্রীরঙ্গপত্তম শত্রুপক্ষ অধিকার করে। টিপুর সৈন্যগন যেভাবে ক্রমপর্যায়ে তিনটি শক্তির সাথে লড়াই করেছিল এবং সবশেষে শহীদের মর্যাদায় মৃত্যু বরণ করেছিল তা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক অলিখিত ঐতিহাসিক অধ্যায়।
যাইহোক, সমস্ত সৈন্যের যখন পতন হয় তখন সুলতান টিপুকে ইংরেজরা চিৎকার করে আত্মসমর্পণ করতে বলে। আহত বীরের এক হাত অস্ত্রাঘাতে অচল,অপর হাতেই যুদ্ধ করতে করতে ভাগ্যহারা টিপু ভারতেরই মাটিতে দেশের সুযোগ্য সন্তানের মতো নিজের প্রানদান করলেন। তবুও জীবন্ত বন্দি হতে ঘৃনা বোধ করেছিলেন।
টিপু সুলতানের বীরত্বের মেরুদণ্ড ভেঙে গিয়েছিল তাঁর দলের বেশ কিছু ফরাসি অফিসারদের বিশ্বাসঘাতকতায়।
ইংরেজ টিপু সুলতানের মৃত্যুতে বুঝতে পারলো,তাদের পিটিয়ে তাড়াবার মত ক্ষমতা যে ভারতীয় বীরের ছিল,সে বীর আজ নিশ্চিহ্ন, সুতরাং ইংরেজদের ভবিষ্যত হল উজ্জ্বল। ওই যুদ্ধের প্রবীণ নায়ক মি. মর্নিংটনকে টিপু সুলতানকে নিহত করার জন্য প্রধান বিচারপতি জন আনস্ট্রুথার ১৭৯৯ খ্রীস্টাব্দের ১৭ ই মে যে চিঠি দিয়েছিলেন তা থেকে এটা প্রমাণ হয়। তিনি লিখেছিলেন- ভারতীয় ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে গৌরবময় ও উজ্জ্বল ঘটনার জন্য আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে সন্তুষ্টি এবং অভিনন্দন জানাই।

(সৌজন্য: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিম শহিদ, লেখক প্রশান্ত হালদার)

Post a Comment

0 Comments