লেখক- তহা আলি খান
কথায় বলে - "অভাগা যেখানে যায় সাগর শুকিয়ে যায়"। প্রবাদটি খুবই সংগতভাবে বাংলায় মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সারা দেশের বেশিসংখ্যক রাজ্যে তারা সর্বদা ছিল অত্যাচারীত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত এবং বঞ্চিত। একটি জাতিকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করার প্রয়াস বাংলায় কিছুটা অস্ফুটভাবে থাকলেও সেটা পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। এবার সেটা বিকশিত হয়ে উঠলো "মুসলিমদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির একশো শতাংশ কাজই হয়ে গেছে" বক্তব্য প্রদানকারী মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া Municipal Service Commission এর কর্মক্ষেত্রের বিজ্ঞপ্তিতে (Advertisement No - 20/2020).. Website নিম্নে দেওয়া হলো-
https://www.mscwb.org/home/emp_notice
Advertisement -এ পরিষ্কার লেখা আছে "N.B. - Muslim Candidates are not suitable." এই N.B. এর পুরো নাম হলো Nota Bene অর্থাৎ "বিশেষ দ্রষ্টব্য" বাকি Sentence এর বাংলা হলো - "মুসলিমরা এই কাজের যোগ্য নয়।" এটার অর্থ হয়তো অনেকেই জানেন, কিন্তু কিন্তু অন্ধভক্ত তৃণমূল মুসলিম কিংবা সেকুলারগণ বুঝেও বুঝতে চান না।
সাচার রিপোর্টের পরে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা ভেবেছিলেন সামাজিক ন্যায্যতার তাগিদেই তাঁদের সমস্যা ও বঞ্চনাগুলো দূর করার একটা জোরদার চেষ্টা হবে। কিন্তু তথ্য ও বাস্তব সেই আশাকে সম্মান করেনি।
সংগঠিত ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সরকারি চাকুরিতে মুসলিমদের অকিঞ্চিৎকর উপস্থিতির অন্যতম কারণ উচ্চশিক্ষা চত্বরে মুসলিমদের লক্ষ্যণীয় অনুপস্থিতি। শিক্ষালাভের বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পেলেও, সরকারি চাকুরিতে সর্বদা অবহেলার শিকার হচ্ছেন মুসলিমরা। এবার তাদের রাজ্য সরকার এই নোটিফিকেশন করে বুঝিয়ে দিলেন মুসলিমরা একেবারে অযোগ্য, সরকারি চাকুরি করার অধিকার তাদের নেই।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সময়জ্ঞান সর্বজনবিদিত। যেমন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নাথুরাম গডসের পিঠ চাপড়ে লন্ডনে মহাত্মা গান্ধীর কথা শুনিয়েছিলেন। তিনি এমন কথা বলেন যেন সহিষ্ণুতার বার্তা পৃথিবীর প্রতিটি কোনে দ্রুত পৌঁছে যায়। কিন্তু আমি বহুবার বহু আর্টিকল লিখে প্রমাণ করে দিয়েছি কেন্দ্র সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার উভয়েরই মেন্টর RSS, তাদের জাতীয়তাবাদের মূল কথা হিন্দুত্ব, তাদের অবস্থান বহুত্ববাদের বিপরীতে। সহিষ্ণুতা নয়, অসহিষ্ণুতাই তাদের মতবাদের মূল উপজীব্য। তাই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কবিতা 'অসহিষ্ণু' -এর শেষাংশে লিখেছিলেন-
"সহিষ্ণুতা আজ বড় অসহায়,
অসহিষ্ণুতায় ভরেছে ধরা।
কে কার বিচার করবে?
সহিষ্ণু হও ধরা""
সত্যিই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী উত্তাল রাজ্যের রাজ্য-রাজনীতি, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, উগ্রতা, সরকারি প্রশ্রয়ে ধর্মীয় আগ্রাসন এবং আপনার "লেডি হিটলারের" মতো ভূমিকায় 'সহিষ্ণুতা আজ বড়োই অসহায়।'
আজকের রাজ্য-রাজনীতির উত্তাল পরিবেশ কেবলমাত্র জনগণের মোটিভেশন পরিবর্তনের জন্য। এটা সেকুলার এবং মুসলিম সমাজ যতো শীঘ্রই বুঝতে পারবেন ততোই তাঁদের মঙ্গল হবে। এইসব নাটক করে নরেন্দ্র মোদীকে, 'দূরে গিয়ে কাছে আসার' বার্তা দিতে আর নিজের অসহিষ্ণু ভাবমূর্তিতে একপ্রস্থ প্রলেপ দিতে চাইছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী।
স্বাধীনতার পরে কংগ্রেসের 28 বছরের রাজত্বকালে সরকারি চাকুরিতে মুসলিমরা ছিল খুবই নগণ্য। সেই স্থান থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় তারা বামফ্রন্টকে সমর্থন করে। বামফ্রন্টের জমানায় তবুও সরকারি ক্ষেত্রে 2-3 শতাংশ মুসলিম প্রতিনিধি নিযুক্ত হতো। আরোও বেশী পাওয়ার আশায় তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করে। কিন্তু এটা তাদের চরম ভুল ছিল। "মুসলিম দরদী" দিদি ক্ষমতায় এসেই নিমগ্ন হয়ে গেলেন সম্পূর্ণ মুসলিম-বিহীন সরকারি ব্রিগেড নির্মানের 'মহান ব্রতে'। যার প্রত্যক্ষ উদাহরণ Municipal Service Commission এর সেই Advertisement.
আর এসব কথা মহামান্য মূখ্যমন্ত্রী নিজেই বলে গেছেন। কিন্তু আপনারা বুঝতে পারেননি, কিংবা যারা বুঝেছেন তারা নিজ স্বার্থের জন্য জনগণকে বোঝাননি। মাননীয়া মূখ্যমন্ত্রী তাঁর 'উপলব্ধি' নামক পুস্তকে লিখেছেন -
"এখনকার রাজনীতি
নীতিবর্জিত রীতি।
যখন যেমন তখন তেমন
কথায় কথায় ভীতি।
নীতির বালাই, বক্তৃতার ঝালাই
মনে হয় সব স্মৃতি!
এখনকার রাজনীতি
মুখের কথায় আগুন জ্বলে
কাজের নেই কোনো প্রীতি।
ভোটের সময় ছলনা
ভোট না হলে চলে না
ভোটই বড় সাথী।
তারপরেই সব পগারপার
কে আর ধারে মানুষের ধার
মানুষের হল ছুটি,
এই হল পাশার গুটি।"
গভীর ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে যাওয়া মুসলিম সমাজ এই পাশার গুটি বোঝার চেষ্টা করুন। এখনোও সময় আছে জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসুন। আপনারা ষড়যন্ত্রের বলি হচ্ছেন। এখনোও সময় আছে শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসুন।
জানি এই লেখার জন্য আমার উপরে আঘাত আসবে, হতে পারি ষড়যন্ত্রের বলি, কিন্তু বাস্তব সত্য আপনাদের সামনে তুলে ধরাই একজন লেখকের কাজ এবং আমি সেই কাজটাই করেছি মাত্র। আমি জানি আপনাদের আশীর্বাদ যদি আমার উপরে থাকে তবে কোনো আঘাতই আমাকে শেষ করে দিতে পারবে না।
0 Comments