লেখক- আজাদ চৌধুরী, ওয়েব সম্পাদনা- সেখ মইনুল হাসান
পবিত্র কুরআন শিখিয়ে পয়সা বা অর্থ নেয়া বৈধ কি না, এ ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে মুহাক্কিক আলেমগণ বৈধতার পক্ষেই মতামত দিয়েছেন। তাদের যুক্তি হলো, দুটি হাদিস-প্রথম হাদিসটি হলো, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা যেসবের বিনিময়ে মজুরি গ্রহণ করো তন্মধ্যে সমধিক হক হলো আল্লাহর কিতাবের বিনিময়ে মজুরি গ্রহণ করা। (বুখারি শরিফ) এমনকি বিবাহ করতে ইচ্ছুক এক সাহাবির সঙ্গে মোহরানা হিসেবে দেওয়ার মতো কিছু না থাকায়, যতটুকু কুরআন তার মুখস্থ ছিল ততটুকু কুরআনকে মোহরানার বিনিময় হিসেবে ধরে জনৈকা নারীকে তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বুখারি ও মুসলিমে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার সঙ্গে কুরআনের যা আছে, তার বিনিময়েই তাকে তোমার সঙ্গে বিয়ে দিলাম।
রাসুল (সা.) এই দুটি হাদিসকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে কিছু কিছু বিজ্ঞ উলামা বলেন, পবিত্র কুরআন শিখিয়ে বা শিক্ষা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করা যাবে, এটা বৈধ।
আবার আলেমদের কেউ কেউ ব্যক্তির অবস্থানভেদে বিষয়টিকে ভাগ করার কথা বলেছেন। আল্লামা আবুল লাইছ (রহ.) তাঁর আল বুস্তান কিতাবে তালিমুল কুরআন বা পবিত্র কুরআন শিখানোকে তিন প্রকার বলে উল্লেখ করেছেন।
এক. হাসাবা তথা আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকারের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এরা কোনো বিনিময় নেবে না।
দুই. বিনিময় নিয়ে কুরআন শেখাবে।
তিন. বিনিময় নেয়ার শর্ত না করে কুরআন শেখাবে। এরপর যদি হাদিয়া হিসেবে কিছু দেয়া হয় তবে তা গ্রহণ করবে।
প্রথম প্রকারে ছওয়াব পাওয়া যাবে। কেননা বিনিময় না নিয়ে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার করা নবী-রাসূলদের কাজ। অতএব এতে ছওয়াব না হয়ে পারে না।
দ্বিতীয় প্রকারের বেলায় মতানৈক্য রয়েছে। কারো কারো মতে বিনিময় নিয়ে কুরআন শেখানো জায়েয নয়; কেননা কুরআন পৌঁছিয়ে দেয়া একটি দীনি দায়িত্ব, যা কেবল পরকালীন ছওয়াবের আশায় করতে হয়। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।’ আবার কেউ কেউ শর্ত করে বিনিময় নেয়া জায়েয বলেছেন। কেননা কুরআন শেখা মুসলমানদের একটি প্রয়োজন। অতএব পড়ালেখা শেখানোর ক্ষেত্রে যেমন শর্ত করে পয়সা নেয়া বৈধ, অনুরূপভাবে কুরআন শেখানোর ক্ষেত্রেও পয়সা নেয়ায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর যুগ যুগ ধরে শর্ত করে পয়সা নেওয়ার রেওয়াজও চলে আসছে।
তৃতীয় প্রকারটি সবার কাছেই বৈধ; কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র মানবতার শিক্ষক ছিলেন। আর তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতেন। তাই শর্ত না করে কুরআন শেখানোর পর যদি হাদিয়া হিসেবে শিক্ষককে পয়সাকড়ি দেয়া হয়, তবে তা সবার কাছেই বৈধ। (সহজ উলুমুল কুরআন, ড. মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক, ইসলামহাউজ, পৃষ্ঠা-৪৫)
0 Comments