লেখক- Taha Ali Khan
সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ প্রতিদিন 'বাবরি মসজিদ - রামজন্মভূমি' বিবাদের শুনানি করছেন। এখন পর্যন্ত শুনানিতে গেরুয়া পক্ষ যা যা বলেছে তাতে মনে হচ্ছে তারা খুবই কষ্টের মধ্যে আছে। তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের উত্তরে প্যাঁতরামো দেখানো ছাড়া অন্য কোনোও সদুত্তর দিতে পারছে না।
প্রথম দিনেই মন্দির পক্ষ প্যাঁতরামো দেখানো শুরু করে দেয়। প্রথম দিনের টাইটেল স্যুটের শুনানিতে মন্দির পক্ষ বলে- "ইসলামিক আদেশ-নির্দেশ মোতাবেক কোনো ক্রয় করা জায়গা বা ওয়াকফের জায়গার উপরেই মসজিদ নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু বাবরি মসজিদ যেহেতু মন্দির ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে তাই এটি ইসলামিক রূপে অবৈধ।"
কিন্তু মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট তাদের এই যুক্তি খারিজ করে দেন। এর উত্তরে মহামান্য আদালত বলেন, নিম্ন আদালতেও এটা প্রমাণ হয়নি যে, বাবরি মসজিদ কোনো মন্দির ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছিল। এছাড়া বাবরি মসজিদের নীচে কোনো পুরোনো স্থাপত্যের নিদর্শনও পাওয়া যায় নি। তাই কোনো মন্দির ভেঙ্গে বাবরি মসজিদের নির্মাণ করা হয়েছিল আপনাদের এই যুক্তি ভিত্তিহীন।
দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে গেরুয়া পক্ষের প্যাঁতরামো দেখুন। দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট 'নির্মোহী আখড়া'কে বলেন, আপনারা দাবী করছেন সেই জমির মালিক আপনারা। তবে আপনারা জমির দলিল পেশ করুন। নির্মোহী আখড়া মহামান্য আদালতকে বলে, তার কাগজপত্র 1982 সালে ডাকাতিতে চুরি হয়ে গেছে!
আপনারা ভেবে অবাক হবেন, যারা ধর্ম ধর্ম করছেন তারা কতো সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। তাও মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের সামনে! যদিও সুপ্রিম কোর্ট ভালো ভাবেই জানেন কাগজ চুরি গেলেও সরকারি দপ্তরে সবকিছুই নথিভুক্ত থাকে। তাই মহামান্য বিচারক চন্দ্রচূড় জিগ্যেস করে নেন 'জমির খসড়া ও চুরি হয়ে গেছে কি?'
তৃতীয় দিনের শুনানির প্যাঁতরামো দেখুন। এতোদিন গেরুয়া ব্রিগেড দাবী করতো রামলালার জন্ম বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের ঠিক নীচের জমিতে হয়েছিল। কিন্তু "রামলালা বিরাজমান" -এর উকিল তৃতীয় দিনের শুনানিতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চকে বলেন, "জন্মস্থানের জায়গা নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না, এদিক ওদিক ও হতে পারে।" অর্থাৎ মন্দির পক্ষ উল্টে স্বীকার করে নিচ্ছে যে, রামলালার জন্ম অন্যত্রও হতে পারে!
একটা কথা বলবো, আপনারা যদি মনোরঞ্জন করতে চান, হাসতে চান তবে টেলিভিশনে 'কপিল শর্মা' -এর শো দেখার কোনোও প্রয়োজন নেই। আপনারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে চলা 'বাবরি মসজিদ-রামজন্মভূমি' মামলার শুনানি শুনেও মনোরঞ্জন করতে পারেন।
মুঘল বাদশাহ বাবরের মৃত্যু হয়েছিল 1530 সালে। মন্দির পক্ষের উকিল 'পি. এন. মিশ্র' শুনানির 13 তম দিনে মহামান্য আদালতকে বললেন, মন্দির বাদশাহ বাবর ধ্বংস করেননি। মন্দির 1526 সালে বাবরের সেনাপতি 'মীর বাকি' ভেঙ্গে ছিলেন। আর 1528 সালে বাদশাহ বাবরের উপস্থিতিতে বাবরি মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল।
শুনানির 14 তম দিনে তাদের কথা সম্পূর্ণ উল্টে গেল। তারা দাবী করলেন মন্দির মীর বাকি ভাঙ্গেননি। মন্দির ভেঙ্গে ছিলেন বাদশাহ আওরঙ্গজেব। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, বাদশাহ বাবরের মৃত্যুর 130 বছর পরে আওরঙ্গজেব বাদশাহ হয়েছিলেন। মন্দির পক্ষের দাবী অনুযায়ী মন্দির বাদশাহ আওরঙ্গজেব ভেঙ্গে ছিলেন এবং তিনিই এই মসজিদের নির্মাণ করেছিলেন।
অর্থাৎ এর পূর্বের দিনের বক্তব্য অনুযায়ী বাদশাহ বাবর নির্দোষ ছিলেন, তার পরদিন তার সেনাপতি মীর বাকিও নির্দোষ সাব্যস্ত হয়ে গেলেন। আর আসামী আওরঙ্গজেব হয়ে গেলেন। আর আওরঙ্গজেব মসজিদ নির্মাণ করে তার নাম বাদশাহ বাবরের নামে রেখে দিলেন! আজব কথা, আজব যুক্তি!
মহামান্য আদালত এর উত্তরে বললেন, বাদশাহ বাবর মন্দির ভাঙ্গেননি। মন্দির ভাঙ্গাতে বাদশাহ বাবরের কোনোও ভূমিকা ছিল না।
যাইহোক মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শুনে মনে হচ্ছে মামলার রায় তার পক্ষেই যাবে যার কাছে জমির মালিকানার কাগজপত্র থাকবে, 600 বছরের সরকারি নথিতে যার মালিকানার অধিকারের কথা উল্লেখ থাকবে। আর ভিত্তিহীন দাবী খারিজ করে দেওয়া হবে।
আর নয়তো আর একবার কাশ্মীর করা হবে। অথবা গুলি আর বন্দুক বুকে রেখে রাম মন্দির নির্মাণ করা হবে।
0 Comments