Ad

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোজার স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব- উপবাস ও অটোফেজি



লেখক-  মহ আরিফুর রহমান, ওয়েব সম্পাদনা- সেখ মইনুল হাসান


উপবাস সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই, এটা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত কিন্তু অটোফেজি শব্দটি হয়ত অনেকের অজানা। অটোফেজি শব্দটির উৎপত্তি হয় আজ থেকে প্রায় ৫৪ বছর আগে ১৯৬৩ সালে, তবে বিশ্ববাসী এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে ২০১৬ সালে। অটোফেজি প্রক্রিয়ার ক্রিয়া-কৌশল আবিষ্কার করার জন্য ২০১৬ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানী ইওশিনোরি ওসুমি। আমি জাপানে এসে অটোফেজির সাথে পরিচিত হই ২০১৫ সালে, আমার গবেষণা কাজের বিষয় এটি। অনেক বাংলাদেশীসহ বর্তমানে পৃথিবীতে কয়েক হাজার গবেষক এটা নিয়ে কাজ করছেন। আমি বিগত ১ বছরের অধিক সময় ধরে এটা নিয়ে কাজ করে এটা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান আহরন করেছি, সেটা থেকেই লেখার চেষ্টা করছি।
অটোফেজি বা আত্মভক্ষণ কি?
এটি মূলত গ্রিক শব্দ যার বাংলা অর্থ হল-‘আত্মভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা’। কত ভয়ানক বিষয়, তাই না? বিষয়টি শুনতে ভয়ানক হলেও এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারি কেননা এটা শরীরের আভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহকে পরিষ্কার করার একটা প্রক্রিয়া যা সম্পন্ন হয় কোষীয় পর্যায়ে (জীবদেহের গঠন ও কাজের একক হছে কোষ)। মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই আত্মভক্ষণ কোষের কোন ক্ষতি করে না বরং কোষকে সজীব রাখতে সাহায্য করে। যদি এই আত্মভক্ষন প্রক্রিয়াতে কোন সমস্যা হয়, তবে শরীরে নানা রকম রোগের উৎপত্তি হতে পারে।
অটোফেজি না থাকলে কিভাবে রোগ হয়?
আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রোটিন তৈরি/সংশ্লেষ হয় এবং এই তৈরি হওয়া প্রোটিনের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য তার (প্রোটিনের) গঠনটি অ্যামিনোএসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক গঠন না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে এবং নানা রোগের সৃষ্টি করবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০% প্রোটিন সঠিকভাবে সংশ্লেষ হতে পারেনা ফলে এদেরকে ধ্বংস করা, শরীর থেকে বের করে দেওয়া কিংবা অন্য উপায়ে কাজে লাগানো জরুরি কেননা শরীরে এরা থাকলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হবে। চিন্তা করার কিছু নেই, আপনার দেহের অটোফেজি প্রক্রিয়া এ ক্ষতিকারক প্রোটিনকে ধ্বংস করে বা কাজে লাগায়।
কেন বিজ্ঞানী ওসুমিকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হল?
১৯৫০ দশকের মাঝামাঝি বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন কোষের অভ্যন্তরে সাইটোপ্লাজমের সাইটোসলে (Cytosol) এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ রয়েছে, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের এনজাইমও আছে। বিজ্ঞানীগন তখন এই প্রকোষ্ঠটির নাম দেন লাইসোজোম যা বিজ্ঞানীদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কেননা মানুষের প্রায় ৪০টি বংশগত রোগের সঙ্গে লাইসোজোমে থাকা এনজাইমের ত্রুটির সম্পর্ক রয়েছে।এটা আবিস্কারের ফলে বেলজিয়ান বিজ্ঞানী Christian de Duve ১৯৭৪ সালে নোবেল বিজয়ী হন। কিন্তু লাইসোজোমে কি ঘটে তা বিজ্ঞানীদের কাছে পরিস্কার ছিলনা। ‘ডে দুভের আবিষ্কারের হাত ধরে ১৯৬৩ সালে “অটোফেজি” শব্দের উৎপত্তি হয়। ‘ডে দুভের আবিষ্কারের পর কয়েক দশক পর্যন্ত খুব নগণ্য পরিমাণ কাজ হয় অটোফেজি নিয়ে। এর প্রধান কারণ অটোফেজি তখন কেবল কোষের আবর্জনা নিষ্কাশন পদ্ধতি হিসেবেই পরিচিত ছিল। এর কৌশল, প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোন প্রকার মাথা ঘামাতে চেষ্টা করেনি কেউ। বিজ্ঞানী ইওশিনোরি ওসুমির আবিস্কারটা ছিল লাইসোজোম নামক প্রকোষ্ঠটির কাজ এর উপর এবং কিভাবে এটা আমাদের দেহের ক্ষতিকারক প্রোটিনকে ধ্বংস করে বা কাজে লাগায় সেই ক্রিয়া-কৌশল নিয়ে। ওসুমির গবেষনার ফলশ্রুতিতে অটোফেজি নিয়ে গবেষনার দ্বার উন্মোচিত হয়। পরবর্তী গবেষকগণ অটোফেজি প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাতের সাথে পারকিন্সন্স, আ্যলজাইমারস, ক্যান্সারের মত রোগের সূত্রপাত জড়িত তা প্রমান করেন। অটোফেজি কৌশল ব্যাখ্যা ও নতুন গবেষনা দ্বার উন্মোচনে ওসুমির অসামান্য অবদান কে স্বীকার করে তাকে ২০১৬ সালের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়।
UPS এবং অটোফেজির মধ্যে পার্থক্য কি?
অটোফেজি আবিষ্কারের আগে ১৯৭০-১৯৮০ এর দশকের দিকে বিজ্ঞ্যানীগন আর একটা পদ্ধতি আবিস্কার করিলেন যার মধ্য দিয়ে কোষ অনাকাংখিত প্রোটিনকে Proteasome এর মাধ্যমে পরিপাক করে ব্যবহার করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় Prteasome, Ubiquitin নামক প্রোটিনকে অপ্রয়োজনীয় প্রোটিনকে ধরার জন্য লাগিয়ে দেয়। তারপর সেই অপ্রয়োজনীয় প্রোটিনকে Protesome এর আভ্যন্তরীন চেম্বারে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। কোষের এই প্রক্রিয়াকে “Ubiquitin-mediated-protein degradation system বা UPS” বলে। এই আবিস্কারের ফলে Aaron Ciechanover, Avram Hershko ও Irwin Rose ২০০৪ সালে চিকিৎসাবিদ্যায়/মেডিসিনে নোবেল পুরষ্কার পান।
কিন্তু সমস্যা হল UPS প্রক্রিয়ায় বড় ধরণের বা long-lived প্রোটিনকে ভাঙ্গা যায়না। বড় ধরনের প্রোটিনকে কোষ অটোফেজি প্রক্রিয়ায় “Autophagosome” তৈরী করে বা ব্যাগে ভরে এনে ভেঙ্গে ব্যবহার করে। আর এটার ক্রিয়া-কৌশল আমাদের জানাতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানী ই জন্যওশিনোরি ওসুমি, উনি দেখিয়েছেন লাইসোজোম শুধু আমাদের ডাস্টবিন নয়, আমাদের দেহ এটা থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন প্রক্রিয়াজাত করে। অর্থাৎ এটা ডবল কাজ করে- একদিকে কোষ তার নিজ আবর্জনামুক্ত করে, অপরদিকে সেই আবর্জনাকে আবার প্রক্রিয়াজাত (Recycling) করে পুনরার শরীরের নানাবিধ কাজে লাগায়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যেভাবে বাসার ময়লা চিহ্নিত করে ঝাড়ু দিয়ে একত্র করে ফেলি এবং পরে সেগুলী একটি ব্যাগ এর মধ্যে ঢুকিয়ে ব্যাগের মুখটি ভাল করে এটে দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেই, কোষও ঠিক একই পদ্ধতিতে কাজ করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল- লাইসোজোম এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ দেহের অতি জটিল ও প্রয়োজনীয় কাজ করে সুস্থ ও জীবিত রাখে। এদের যে কোন একটির কাজকর্মে ব্যাঘাতের সৃষ্টি হলে কোষ অসুস্থ হয়ে যায়। তখন আমরা বড় বড় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ি এমনকি মৃত্যুও বরন করি।
এপপটোসিস এর সাথে অটোফেজি এর কি সম্পর্ক?
আমাদের শরীরে এপপটোসিস নামে আরও একটি প্রক্রিয়া আছে যার মাধ্যমে শরীর পুরাতন কোষগুলো নিজে থেকেই মারা যায়, কোষের এই আত্মহত্যার ব্যাপারটাই আসলে এপপটোসিস। এপপটোসিস শরীরের জন্য উপকারী, এ প্রক্রিয়ার সাথে অটোফেজি প্রক্রিয়ার কিছুটা মিল রয়েছে। মনে করুন, আপনার একটা গাড়ি আছে, গাড়িটা পুরাতন হয়ে যাবার পর এটা ফেলে দিয়ে আপনি নতুন একটা গাড়ি কিনে ফেললেন। শরীরের ক্ষেত্রে পুরাতন কোষ মেরে ফেলে নতুন করে সংশ্লেষের প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে এপপটোসিস কিন্তু আপনি যদি নতুন গাড়ি কিনতে না চান কিংবা নতুন গাড়ি কেনার সক্ষমতা না থেকে তবে গাড়িটা ফেলে না দিয়ে যেসব যন্ত্রপাতি কাজ করছে না, সেগুলো বদলে নিবেন। এটা হচ্ছে অটোফেজি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ার শরীর তার পুরাতন যন্ত্রগুলো বদলে নেয়।
আমরা জানি, কোষ (Cell) হল সকল জীবের গাঠনিক এবং কার্যকরি একক। এটি জীবের ক্ষুদ্রতম একক জীবিত একক, কোষকে সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে আপনি সুস্থ থাকবেন। অটোফেজি প্রক্রিয়া আপনার কোষকে সুস্থ রাখে। মৃত কিংবা বিষাক্ত কোষকে শরীর থেকে বের করা কিংবা জীবাণুর আক্রমন থেকে কোষকে রক্ষা করে অটোফেজি প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, অটোফেজি প্রক্রিয়াটি আমাদের শরীর কে কার্যকরী করে রাখে, দুর্বল অঙ্গাণু থেকে মুক্তি দেয় এবং শরীরে এ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত থাকলে নানাবিধ রোগ হতে পারে। এক কথায় বলা যায়, অটোফেজি রোগ প্রতিরোধ করে এবং আমাদের যৌবন ধরে রাখে।
রোজা বা উপবাসের সাথে অটোফেজি প্রক্রিয়ার কি সম্পর্ক?
দীর্ঘক্ষন উপবাসে থাকা, পরিমানে কম কিংবা কম ক্যালরীর খাদ্য খাওয়া,শারিরীক পরিশ্রম করা ও নিয়মিত নিদ্রার মাধ্যমে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু হয়। বুঝতেই পারছেন, এ প্রক্রিয়া শরীরে চালু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল রোজা বা উপবাস। যখন শরীরে খাবারের সংকট তৈরি হয় তখন অটোফেজি প্রক্রিয়াটি চালু হয়। আপনার বাসায় অনেক ভাল টাটকা খাবার থাকতে আপনি নিশ্চয়ই পুরাতন খাবার খাবেন না! শরীরের ক্ষেত্রে তাই, আপনি যদি কোন পুরাতন যন্ত্র বদলে নিতে চান তবে তাকে উপবাসে ফেলতে হবে। একটু ক্রিয়াকৌশল বলি, অটোফেজি প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রন করে mTOR, এটা বন্ধ থাকলে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু হয়, আর mTOR বন্ধ করার উপায় হচ্ছে উপবাস বা রোজা। আমরা ল্যাবে ইস্টের মাঝে অটোফেজি প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করি, সেখানে rapamacin নামক ওষুধ দিয়ে mTOR বন্ধ করে এ প্রক্রিয়া চালু করি।
একটা কথা প্রচলিত আছে- ‘না খেয়ে মানুষ মরার চাইতে নাকি খেয়ে বেশি মরে’। আসলেই তাই, ইউরোপে ইদানিং নাকি উপবাসে থাকার হিড়িক পড়েছে। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলে ‘Medical fasting’, সাধারণত রাতের খাবারের পর সকালের নাস্তাটা বাদ দিয়ে আকেবারে দুপুরে খেতে বলা হয়। এ ধরনের চেতনা সৃষ্টির পিছনে ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত একটি বই প্রভাব বিস্তার করেছে। বইটি হচ্ছে প্রখ্যাত জার্মান চিকিৎসাবিদ ড. হেলমুট লুটজানার-এর The secret of successful fasting. অর্থাৎ উপবাসের গোপন রহস্য বইটিতে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যপ্রণালী বিশ্লেষণ করে নিরোগ, দীর্ঘজীবী কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে বছরের কতিপয় দিন উপবাসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ড. লুটজানারের মতে, “খাবারের উপাদান থেকে সারাবছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থসমূহ দগ্ধীভূত হয়ে যায়।”
উল্লেখ্য যে, ‘রমজান’ শব্দটি আরবীর ‘রমজ’ ধাতু থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ দহন করা, জ্বালিয়ে দেয়া ও পুঁড়িয়ে ফেলা। রোজার মাধ্যমে এভাবে জমে থাকা আবর্জনা ধ্বংস না হলে, ঐসব বিষাক্ত পদার্থ শরীরে বিভিন্ন রোগের জন্ম দিত। অন্যদিকে, গ্রিক শব্দ থেকে আগত অটোফেজি এর অর্থ একই। বিজ্ঞানীদের ধারনা অনুযায়ী, আমরা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খাবার খাই বিশেষ করে লাল মাংস, তবে তা IGF-1 এবং mTOR চালু করার মাধ্যমে অটোফেজি প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। আর mTOR বন্ধ করে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু করার উপায় হচ্ছে উপবাস বা রোজা। বিজ্ঞানীরা যদি উপবাসের অনেক উপকারিতা আপনার সামনে নিয়ে আসে তবুও আমরা খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারব কি? আমরা ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারিনা, তাহলে চিন্তা করে দেখুন! আল্লাহ কত দয়ালু, তিনি আমাদের জন্য রোজা ফরজ করে দিয়েছেন। রোজা সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “ওয়া আনতা সুউমু খাইরুল লাকুম ইনকুনতুম তা’লামুন” অর্থাৎ যদি রোজা রাখো তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, যদি তোমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারো।” (সূরা বাকারাহ-১৮৪) আমরা কি কখনো উপলদ্ধি করি? এ আয়াতে আল্লাহ রোজা পালনের নানাবিধ কি কি কল্যাণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন? রোজার প্রতিদান কি শুধু পরকালে? দুনিয়াতে আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের নিছক কষ্ট দেয়ার জন্যে ইহা ফরজ করেছেন? নিশ্চয়ই নয়। আসলে রমজানের এ বাহ্যিক উপকারিতার কথা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক আগেই প্রমাণ করেছে। এ বিষয়টি এখন সর্বজনগ্রাহ্য একটি বাস্তবতা। আল্লাহ যেহেতু আমাদের জন্য এ বিধানটি দিয়েছেন, ফলে এতে যে অবশ্যই কল্যাণ নিহিত রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকৃতপক্ষে, রোজার সীমাহীন এবং অফুরন্ত প্রতিদানের বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই অবহিত রয়েছেন। তবে আমরা রোজা রাখব অটোফেজির জন্য নয়, আল্লাহকে খুশি করার জন্য কেননা তিনি আমাদের উপর এটা ফরজ করে দিয়েছেন এবং এর প্রতিদান কি দিবেন উনিই ভাল জানেন।
আপনি কী দীর্ঘজীবন কামনা করেন?
তাহলে রোজা রেখে বা উপবাসে থেকে আপনার কোষগুলীকে যথাযথ ভাবে অটোফেজি করার সুযোগ দান করে কোষকে সুস্থ ও সক্ষম রাখুন এবং আপনিও দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ ও সক্ষম থাকুন। আপনার যৌবন ধরে রাখতে হলে, অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে। আর আপনি রোজা থাকলেই, অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু হবে বা আপনার কোষগুলী অটোফেজি করার সুযোগ পাবে। আপনার বাসায় কাজের লোক না থাকলে যেমন ময়লা জমে বাসা নোংরা হয়ে যায়, তেমনি আপনার দেহে অটোফেজি প্রক্রিয়া চালু না থাকলে আবর্জনা জমে দেহ নোংরা হয়ে যায়। অটোফেজি প্রক্রিয়া আপনার দেহের জন্য ‘কাজের বুয়া’, এই বুয়া খাবার দিলে কাজ করেনা, খাবার না দিলে কাজ করে। এর চাইতে ভাল কাজের লোক কোথাও পাবেন? তাই, রোজার মাধ্যমে উপবাসে থেকে পুরাতন কোষকে বদল করে দেহটাকে পরিস্কার করে নিন। এটা একেবারে সহজ কথা, এর ভিতর কোন মারপ্যাচ বা জটিলতা নাই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রোজা রাখার তৌফিক দিন।
তথ্যসুত্রঃ
4. Secrets of Successful Fasting -Hellmut Lutzner (July 1984)
5. How to renew your body: fasting and autophagy-Dr. Jason Fung (2016)
(NB. আমার লেখায় অনিচ্ছাকৃত কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে গেলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং অনুগ্রহ করে শুধরে দিবেন।)

Post a Comment

0 Comments