বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা
- এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ভৌগোলিক অবস্থান, ইতিহাস ও সভ্যতা, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার, জ্ঞানী ব্যক্তিদের চিন্তাধারা ও জীবন দর্শন প্রভৃতি বিষয় আমরা কেবল বই পড়ার মাধ্যমেই জানতে পারি।
- অজানাকে জানা ও অচেনাকে চেনার যে চিরন্তন আগ্রহ, তা বই পড়ে মেটানো যায়। অতএব, একটি ভালো বই-ই হচ্ছে মনের পুষ্টি যোগানোর অন্যতম উপায়।
- বই মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম উপায়। মানুষকে আনন্দ দেয় বই আর তাই অবসর সময়ে যাদের বই পড়ার মতো চমৎকার অভ্যাস আছে, তারাই হচ্ছে প্রকৃত ভাগ্যবান।
- বই পড়ে মানুষ তৈরি করে নিজস্ব একটি ভুবন। আনন্দময় এই জ্ঞানের ভুবনে মানুষ আপন মনে বিচরণ করে।
- একটি উত্তম বই মানুষকে মহৎ হতে শেখায়, মনকে প্রসারিত করে, বুদ্ধির বিকাশ ঘটিয়ে জীবনকে করে তালে পরিমার্জিত।
- আমরা জানি, যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতা বিকাশে জ্ঞানী-গুণী ও দার্শনিক ব্যক্তিরা নানাভাবে অবদান রেখে চলেছেন। নিরলস সাধনা দ্বারা জীবনের শাশ্বত সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা তাঁদের পক্ষেই সম্ভব। অতএব, তাঁদের চিন্তা-চেতনা ও জ্ঞানগর্ভ অভিজ্ঞতা বই-পুস্তকের মাঝেই প্রতিফলিত হয়।
- আমরা যত অধিক সংখ্যায় বই পড়বো, আমাদের মনের চক্ষু ততই উন্মোচিত হবে। যে দেশে আমাদের কখনোই যাওয়া সম্ভব নয়, বইয়ের পাতার রথে চড়ে আমরা সে দেশে অনায়াসেই চলে যেতে পারি।
- একমাত্র বই-ই আমাদের দেয় এ বিশ্বের জানা-অজানা বহু রহস্যের সন্ধান। তাই আমাদের অনুসন্ধিৎসু মনের পিপাসা মেটায় একটি ভালো বই, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
- একটি উন্নতমানের বই বা পুস্তকই হচ্ছে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যার সাথে পার্থিব কোন ধন-সম্পদের তুলনা হতে পারে না। মানুষের ধন-রত্ন, অঢেল সম্পদ এক সময় নিঃশেষ হয়ে যায়, কিন্তু একটি ভালো বইয়ের আবেদন কখনও হারিয়ে যায় না। তাই আমরা বই পড়তে ভালোবাসি এবং বই পড়ি।
- বই পাঠে অনুরক্ত হলে বই কেনার প্রতিও আগ্রহ অনেকখানি বেড়ে যায়। পছন্দসই বই কিনে অনেকেই নিজেদের সংগ্রহে রাখে। আর সত্যি বলতে বই কিনে কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
- অবসরে, অবকাশে একটি ভালো বই হচ্ছে বিনোদনের অন্যতম সহায়ক। বই-ই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত জ্ঞানদাতা।
- মনের দিগন্তকে প্রসারিত করে তালে একটি বই। তাই জ্ঞান লাভের জন্য প্রত্যেককেই বইয়ের দ্বারস্থ হতে হয়। অতএব বলা যায়, জ্ঞান লাভের উৎস হিসেবে বইয়ের কোন বিকল্প হতে পারে না।
- সমাজ-সংসারের নানা দুঃখ-কষ্ট থেকে রেহাই পেতে হলে বই পড়ায় মনোনিবেশ করতে হবে। বই মানুষের এক ঘেঁয়ে জীবনে আনে বৈচিত্র্য, মানুষকে দেয় স্বস্তি ও অপার্থিব শান্তি। মনোজগতের অবসাদ ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে একটি উন্নতমানের গ্রন্থকেই বেছে নিতে হবে।
- জগতের মহামানব ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা আমাদের দুঃখ কষ্ট ও যে কোন বিপদে সংকটে প্রেরণার উৎস। তাঁদের বিস্ময়কর জীবনী আমাদের উৎসাহ যোগায়। মহামানবদের কর্ম স্পৃহা, সহিষ্ণুতা আর ত্যাগ-তিতিক্ষার কাহিনী বই পড়েই জানা যায়।
- এছাড়া একটি ভালো বই বা গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে পারি। ঘরে বসেই আবার বিভিন্ন দেশের সমাজ ব্যবস্থা, জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, আচার আচরণ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও আরো অনেক বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। এগুলো জানার জন্য অর্থ ব্যয় করে অন্য দেশে যাওয়ার কোন প্রয়োজন হয় না।
- মহাজাগতিক বিভিন্ন রহস্য অথবা মহাশূন্য পরিভ্রমণের নানা কথাও আমরা বই পড়েই জানতে পারি। বই কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয় না। তাই সুলভ মূল্যে কেনা একটি বই থেকে যা কিছু শেখা যায়, তা অন্য কোন মাধ্যম থেকে লাভ করা সম্ভব নয়।
- ইতিহাস, ঐতিহ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম এমনি যে কোন বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হলে নিয়মিত বই পড়তে হবে। আর তাই বই পড়ার যে আনন্দ, তা এক কথায় অতুলনীয়।
- বইয়ের প্রতি সবাইকে আকৃষ্ট করে তুলতে হবে। বিশেষতঃ আমাদের শিশু-কিশোরদের মাঝে শৈশব থেকেই এ বোধ জাগিয়ে দিতে হবে। কারণ বিদ্যালয়ে যে পুঁথিগত জ্ঞান শিশু-কিশোররা লাভ করে তাতে মেধার তেমন বিকাশ ঘটে না। তাই পাঠ্যপুস্তকের বাইরে তাকে বই পড়তে উৎসাহিত করতে হবে।
- উৎকৃষ্ট মানের বই তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে শিশু-কিশোররা কি ধরনের বই পড়ছে সেদিকে বড়দের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। যে বই পড়ে কোন উপকার হয় না, তা কখনোই পড়া উচিত নয়।
- বই পড়ে শিশু-কিশোররা জ্ঞান অর্জন করবে, সেই সাথে উন্নত চরিত্র গঠনে অনুপ্রাণিত হবে। ওরা অবসর সময়ে বই সংগ্রহ করে নিজেদের উদ্যোগে ও অভিভাবকদের সাহায্যে পাঠাগারও গড়ে তুলতে পারে। তবে কেবল শিশু-কিশোরই নয়, যুবক-বৃদ্ধ প্রত্যেককেই ভালো বই পড়তে হবে। এতে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন অনেকাংশে সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ হবে, সন্দেহ নেই।
- অজ্ঞতা ও কুসংস্কারমুক্ত জীবন গড়ার প্রয়োজনে গ্রন্থ পাঠে মনোযোগী হওয়া দরকার। একটি ভালো বই মানুষকে প্রকৃত সুখ দেয়। মনন, মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিকে শানিত করে।
- বই এক অপার্থিব আনন্দের উৎস। অতএব, সমস্যা ক্লিষ্ট জীবনে গ্রন্থের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। তাই জ্ঞান অর্জন ও একই সাথে বিনোদনের এই সহজ ও প্রয়োজনীয় বিষয়কে কিছুতেই অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
0 Comments